স্বদেশ ডেস্ক:
আর মাত্র ৬ দিন পর ছাত্রদলের ষষ্ঠ কাউন্সিল। দীর্ঘ ২৭ বছর পর আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর কাউন্সিলরদের সরাসরি ভোটে ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হবেন। ইতোমধ্যে প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের প্রচার বেশ জমে উঠেছে। এ নিয়ে বিএনপি নেতাদেরও আগ্রহ রয়েছে। বসে নেই ‘সিন্ডিকেটের বড় ভাইয়েরাও।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হতে গেলে ‘সিন্ডিকেটের’ ভোটের পাশাপাশি আঞ্চলিক ভোটও এবার ফ্যাক্টর হবে।
সব শেষ ১৯৯২ সালে পঞ্চম কাউন্সিলে সরাসরি ভোটে সভাপতি নির্বাচিত হন বর্তমানে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও সাধারণ সম্পাদক নিখোঁজ এম ইলিয়াস আলী। এর পর যতগুলো কমিটি হয়েছে সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রিত পকেট কমিটি হয়েছে। এ কারণে ছাত্রদল দিনে দিনে দুর্বল হয়েছে।
ষষ্ঠ কাউন্সিল উপলক্ষে গত মঙ্গলবার থেকে ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থীরা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারে নামেন। তারা তাদের যোগ্যতা, আন্দোলন-সংগ্রামে নিজের ভূমিকা, মামলা-গ্রেপ্তার ও নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে ভোট চাইছেন। নির্বাচিত হলে কী করবেন সে প্রতিশ্রুতিও দিচ্ছেন। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারেও কম যাচ্ছে না কেউ।
প্রার্থীদের মধ্যে কে আওয়ামী লীগ পরিবারের, কে বিগত সময়ে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি করেছে, কোন প্রার্থী কোন সিন্ডিকেটের ইত্যাদি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে তুলে ধরছেন।
নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান খায়রুল কবির খোকন বলেন, নির্বাচন সফল করতে নির্বাচন পরিচালনা, আপিল ও যাচাই কমিটি যৌথভাবে কাজ করছে। প্রয়োজন হলে আমরা আরও স্বেচ্ছাসেবক নেব। নির্বাচন পদ্ধতি সম্পর্কে তিনি বলেন, আধুনিক পদ্ধতিতে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে এবং সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে। জাতীয় নির্বাচনের মতোই সিস্টেম। বুথ, ব্যালট বাক্স, ভোটার লিস্টসহ আনুষঙ্গিক সব কিছুই থাকবে।
সভাপতি পদে প্রার্থী হয়েছেন ৮ জন। তাদের মধ্যে প্রভাবশালী নেতা সুলতান সালাহউদ্দিন টুকুর আস্থাভাজন কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ এবং উত্তরাঞ্চলের বিএনপির নেতাদের আস্থাভাজন বগুড়ার ফজলুর রহমান খোকন- সিন্ডিকেট ও আঞ্চলিক দুই হিসেবেই আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছেন। আরও আলোচনায় রয়েছেন বাগেরহাটের হাফিজুর রহমান ও জামালপুরের সাজিদ হাসান বাবুও। কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ বলেন, সবাই আমার ব্যাপারে জানেন। ১৭টি মামলা আছে আমার বিরুদ্ধে। ওয়ান ইলেভেন থেকে আন্দোলনে-সংগ্রমে রাজপথে আছি। বিভিন্ন সময় ছাত্রলীগের হাতে নির্যাতিত হয়েছি, গ্রেপ্তার হয়েছি। আমি জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।
বৃহত্তর উত্তরবঙ্গ থেকে আসা একমাত্র সভাপতি প্রার্থী ফজলুর রহমান খোকনও বেশ আশাবাদী। তিনি বলেন, শুধু উত্তরবঙ্গ নয়, অন্যান্য বিভাগের কাউন্সিলররাও আমাকে চাইছেন। তাদের চাওয়ার কারণেই সভাপতি প্রার্থী হয়েছি।
হাফিজুর রহমান বলেন, আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথে ছিলাম। ফলে নির্বাচন নিয়ে বেশ আশাবাদী। সাজিদ হাসান বাবু বলেন, যেভাবে সাড়া পাচ্ছি তাতে আমি আশাবাদী। এ ছাড়াও সভাপতি পদপ্রার্থী মাহমুদুল হাসান বাপ্পি, রিয়াদ মো. তানভীর রেজা রুবেল, মো. এরশাদ খান ও এবিএম মাহমুদ আলম সরদার প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন।
সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী রয়েছেন ১৯ জন। তাদের মধ্যে বরিশালের সাইফ মাহমুদ জুয়েল ও নোয়াখালীর শাহনেওয়াজ আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছেন। পিছিয়ে নেই সাতক্ষীরার আমিনুর রহমান, পটুয়াখালীর তানজিল হাসান, নরসিংদীর ইকবাল হোসেন শ্যামল ও যশোরের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু তাহেরও।
শাহনেওয়াজ বলেন, আমার বিরুদ্ধে চারটি মামলা রয়েছে। একাধিকবার কারাবরণ করেছি। একাদশ জাতীয় নির্বাচনের সময়ও আওয়ামী লীগের নির্যাতনের শিকার হয়েছি। চূড়ান্ত বিচারের ভার আমি কাউন্সিলরদের ওপর ছেড়ে দিলাম।
আমিনুর রহমান বলেন, ওয়ান ইলেভেন থেকে রাজপথে আছি। কাউন্সিলরদের কাছে যাচ্ছি। তাদের নিশ্চয়তা দিতে চাইছিÑ জয়ী হলে আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন ত্বরান্বিত করব। জুয়েল বলেন, আশা করব, বলয়মুক্ত থেকে কাউন্সিলররা যোগ্যদের নেতৃত্বে আনবেন। এ জন্যই আমি শতভাগ আশাবাদী। তানজিল হাসান বলেন, জাতীয়তাবাদী রাজনীতির কারণে আটটি রাজনৈতিক মামলার শিকার হয়েছি। কয়েকবার কারাবরণ করেছি। আবু তাহের বলেন, সিন্ডিকেটমুক্ত কমিটি চাই। সিন্ডিকেটমুক্ত কমিটি উপহার দিতে না পারলে ছাত্রদল কাক্সিক্ষত লক্ষ্য কখনই অর্জন করতে পারবে না। এ ছাড়াও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হিসেবে প্রচার চালাচ্ছেন জাকিরুল ইসলাম জাকির, মোহাম্মদ কারিমুল হাই নাঈম, মাজেদুল ইসলাম রুমন, ডালিয়া রহমান, সাদিকুর রহমান, কেএম সাখাওয়াত হোসাইন, সিরাজুল ইসলাম, মুন্সি আনিসুর রহমান, মো. মিজানুর রহমান শরিফ, শেখ মো. মশিউর রহমান রনি, মোস্তাফিজুর রহমান, সোহেল রানা ও কাজী মাজহারুল ইসলাম।